এই ঈদুল আজহার চানরাতে স্থানীয় সময় ১১ টায় মুম্বাই হতে কোলকাতা আসলাম। ঢাকার ফ্লাইট সকাল ৭টায় (পরে আরও ২ ঘন্টা লেট) তাই চিন্তা করলাম, এখানকার পোলাপানরা, রাত জাইগা আড্ডা মারেনি, আমাগো পুরান ঢাকার মত হাই ভল্যুম মিউজিক বাজায় নি দেইখা আসি, টাইম পাস হইবো। একটা প্রিপেইড নিয়া জাকারিয়া স্ট্রীট এ নাখোদা মসজিদের সামনে গেলাম। এলোমেলো ভাবে (মনে হয় মুসলমান মালিকদের) কিছু কাপড়-চোপড়ের দোকান খোলা আছে। পোলা আর ভাগিনার জন্য দুইটা চমৎকার শেরওয়ানি টাইপ পাঞ্জাবি কিনলাম। হ্যাপেনিং জয়েন্টস্ এর খোঁজে হাটতে থাকলাম মুসলিম প্রধান ওই এলাকার রাস্তা গুলোতে। কিছু বাড়ির সামনে বড় বড় খাসি বাঁধা রয়েছে দেখলাম, কাঁঠালপাতা দেয়া আছে সামনে। দু’য়েক জন লোক দাঁড়ায়ে আছে, জানালার পর্দার আড়ালে মহিলা এবং তাদের কোলে এক-আধটি শিশুও দেখলাম। আরও কিছু পরিচিত চিপা চাপায় যাওয়ার জন্য হাটতে থাকলাম। হঠাৎ ঢিংকা-চিকা‘র আওয়াজ পাইলাম, হাজার ওয়াটের পেভে মনে হইলো। আরে, এটাই তো খুঁজতেছিলাম। দ্রুত হাইটা মোড় পার হইয়া দেখি মা কালি’র প্রতিমা ডুবান্তিস এর মোবাইল ডিজে পার্টি। বুঝলাম না, আমার পুরান ঢাকার নেইবারহুডে সবাই প্রতিমা সেই কবে বিসর্জন করছে – এরা আজকে করতেছে! ওই ডিজে পার্টি যাওয়ার পর নিরাপদ রাস্তা গুলোতে আবার হাটা শুরু করলাম। নাহ্ – পাইলাম না কোন কিছু হ্যাপেনিং। আবার নাখোদা মসজিদের সামনে গেলাম। যাইয়া দেখি কোলকাতা নগরপালিকা’র পরিচ্ছন্ন কর্মিরা মসজিদের সামনের রাস্তা ঝাড়ু দিয়া পরিস্কার করতেছে। সকালে ঈদের নামাজের জামাত রাস্তা পর্যন্ত চইলা আসবে, সেই জন্য। ময়লার ট্রাকটা পার কইরা একটা দোকানে পানি কিনতে গিয়া দেখি জটলা। জটলার সাইড দিয়া দোকানির কাছে পানি চাওয়া, বোতল পাওয়া, টাকা দেওয়া, খুচরা ফেরত নেওয়া পর্যন্ত ওই জটলার দিকে কানের এন্টেনা উচা রাখলাম। পরে বুঝলাম স্থানিয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতার বিশেষ মদতে এই পরিস্কার কাজ চলতেছে। স্থানিয় মুরুব্বিরা তারে খাতির করতেছে, চা-পান খাওয়াইতেছে। উনি সবাইকে ঈদ মোবারকা জানাইতেছেন আর উপদেশ দিতেছিলেন। পানি খাইতে বোতল আর মুখ উচা করতে গিয়া দেখি লাইট-খাম্বা গুলাতে ছিয়ানব্বইয়ের গেটআপে (হেজাব পড়ে, দুইহাত মুনাজাতরত) আমাদের নেত্রীর ছবি। নাক-মুখ দিয়া পানি ছিটকাইয়া বের হইলো। ভাল কইরা সামনে গিয়া দেখি মমতাময়ী মুখ্যমন্ত্রীর মুখচ্ছবিরে, নিজের নেত্রী মনে করছিলাম। ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বানি সংবলিত ফ্রেম ব্যানার। পাশেই দেখলাম আরেকটা ব্যানার, যেটাতে হাইকোর্টের রুলিং সম্বলিত একটা বক্তব্য লেখা। আবার পানি খাইলাম; দোকানের জটলায় উপস্থিত মসজিদের মুসল্লী, বড়-ছোট ও ফুটপাতের দোকানওয়ালা, অন্ধ ভিখারি সকলের চেহার স্ক্যান করার চেষ্টা করলাম। আর ঠিক তক্ষুনি চোখের সামনে, আমার দেশের সংখ্যালঘুগুলার চেহারা ভাইসা উঠলো। টাইম পাসান্তি বাদ দিয়া এয়ারপোর্টে ফেরত গেলাম।
বিঃদ্রঃ লেখাটি ফেসবুকে একজনের স্ট্যাটাসে comment হিসেবে লিখেছিলাম। সেখান থেকে কপি ও কিছু সম্পাদন করে পেস্ট করলাম। হয়তে পরে কখনো এই লেখাটিতে আরও কিছু তথ্য যোগ করবো। যদি মনে আসে তাইলে! :)