Monthly Archives: April 2012

হাতে রং পেন্সিল

আমার হাতে খড়ি কবে কিভাবে হয়েছিলো, আমার মনে নেই। মনে থাকবারও কথা নয়। আব্বাকে জিজ্ঞেস করলে বলতে পারবেন, হয়তো। পুরাতন ঢাকার মধ্যবিত্ত অভিভাবকরা এসব বুঝতেন না, বা এসব বোঝার সময় পেতেন না। কিন্তু আমার মা-বাবা আমাদের পড়ালেখা করানোর গুরুত্ব ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন। তাঁদের সবগুলো সন্তান (দু’ ছেলে, দু’ মেয়ে) শিক্ষিত হয়েছে, মানুষ হয়েছে অন্ততঃ। আমার এক বোন স্নাতক, আরেকজন স্নাতকোত্তর হয়ে বিয়ে করেছে। আমি ‘৯২ সালে মাধ্যমিক পাস করেছিলাম। আমরা চার বন্ধু ঢাকা বোর্ডে গিয়ে ভীড় ঠেলে, সেন্ডেল হারিয়ে, ফলাফল জেনেছিলাম। মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর পত্রিকাগুলো বিভিন্ন বোর্ডের মেধা তালিকায় স্থান অধিকারীদের পিতা-মাতা সহ ছবি প্রকাশ করতো। জিপিএ ব্যবস্থা প্রণয়নের পর, সেই বার্ষিক ছবি ছাপানোর বিষয়টি আর নেই। সময় বদলেছে, পরীক্ষা পদ্ধতি বদলেছে, ফলাফল প্রকাশের উপায় বদলেছে। মা-বাবা বদলে যাননি, সন্তানদের প্রতি তাদের দায়িত্ব, কর্তব্য ও যত্নশীলতা বদলায়নি। অন্ততঃ পড়ালেখা গুরুত্ব দেশের সকল মা-বাবাই অনুধাবণ করতে পারেন। যদিও অনেক অভিভাবকই সামর্থ্যের নিকট হার মেনে, এই গুরুত্ব ভুলতে বাধ্য হয়েছেন।  সবার জন্য শিক্ষা, আমার দেশে শুধুই কাগজে লেখা তত্ত্ব।

আমি বত্রিশ বছর বয়েসে বিলম্বিত-বিয়ে করেছি। পরের বছর আমার ছেলের জন্ম হয়েছে। আজ তার বয়স চৌত্রিশ মাস। আমার খুব ইচ্ছে ছিলো, তাকে প্রাক-বিদ্যালয়ে পড়াবো। তবে, আমাদের এলাকায় এরকম কোন সুবিধা নেই। বিকল্প হিসেবে তাকে গেণ্ডারিয়া কিশলয় কচি-কাচা মেলায় ভর্তি করিয়ে দিলাম।

গেণ্ডারিয়া কিশলয় কচি-কাঁচা মেলা। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে আঁকা দেয়ালচিত্র। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই এঁকেছে।

এটি একটি বিদ্যালয় বটে। তবে এখানে চারু ও কারুকলা প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। আমার ছেলেটির বয়স কম, এখন সে আঁকতে শেখার শ্রেণীতে বসবে। যেকোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আজকে তার প্রথম দিন। যেহেতু সে পড়া লেখা শিখবে না, আর খড়ি এর বদলে রং পেন্সিল দিয়ে আঁকাআঁকি করবে, তাই আজকের দিনটি তার জন্য “হাতে রং” এর দিন।

স্বজন-সুজন বিস্ময় প্রকাশ করেছেন – লেখাপড়া না শিখিয়ে আর্ট স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলাম কেনো? তাদের জন্যে আমার কৈফিয়ত। যদিও তাদের সামনে কখনো বলিনি। আমি নিজে একটি তালিকা করেছিলাম ভাল দিকগুলো নিয়ে।

১। প্রাক-বিদ্যালয়ের বিকল্প।
২। বর্ণমালা লিখতে শেখা সহজ হবে।
৩। আমার মতো বিজ্ঞানের ব্যবহারিক খাতায় তার চিত্রগুলো কুৎসিত হবে না।
৪। শিশুশ্রেণীতে প্রথম প্রথম অনেকেই কাঁদে, এটি করবে না আমার ছেলে।
৫। ক্লাশ শেষে খেলাধূলার সুবিধাটি আমার খুবই পছন্দ হয়েছে।

তথ্য: প্রতি শুক্রবার সকালে ৯টা থেকে ১১টা, বিকেল ৩টা হতে ৫টা এবং শনিবার শুধু বিকেল ৩টা হতে ৫টা তিনটি সময়ে আঁকা শেখানো হয়। শিশুকে যে কোন একটিতে ভর্তি  করানো যাবে।